আম্বিয়ায়ে কেরাম আলাইহিমুস্ সালাম | ১ম পর্ব | হযরত নূহ (আঃ) এর ঘটনা

পবিত্র কোরআন-সুন্নাহে আলোচিত আম্বিয়ায়ে কেরাম আলাইহিমুস্ সালাম

 আহমদ বদরুদ্দীন খান

(সম্পাদক : মাসিক মদীনা)

আল্লাহ্ তাআলার রাসূল : রাসূল শব্দের অর্থ প্রেরিত-পুরুষ, দূত। পথভ্রষ্ট মানব-জাতিকে অন্ধকার থেকে আলোকে বের করে আনার জন্যে যুগে যুগে আল্লাহ্‌ তাআলা যে সকল মহাপুরুষকে দুনিয়াতে প্রেরণ করেছেন, তাদেরকেই রাসূল, নবী ও পয়গাম্বর বলা হয়। 

রাসূলগণ সকলেই আল্লাহ্ তাআলার প্রিয় বান্দা। তাঁদের কাছে ওহী তথা আল্লাহ্ তাআলার বাণী আসতো। হযরত জিবরাঈল (আ.) এ সকল বাণী তাঁদের কাছে পৌঁছাতেন। রাসূলগণ মানুষের কাছে যে শিক্ষা নিয়ে এসেছেন, তার মূল কথা হল :

১. তাওহীদ অর্থাৎ, আল্লাহ্‌ তাআলা এক। তাঁর কোন শরীক নেই।

২. দীন অর্থাৎ, আল্লাহ্ তাআলার দেওয়া জীবন বিধান।

৩. আখলাক অর্থাৎ, গুণাবলী ও ভালো আচরণের নিয়ম-কানুন।

৪. শরীয়ত অর্থাৎ, হালাল-হারাম ও আদেশ-নিষেধের বর্ণনা।

পৃথিবীর প্রত্যেক জাতি যাতে এই সকল শিক্ষা লাভ করে উপকৃত হতে পারে, সেজন্যে আল্লাহ্ তাআলা প্রত্যেক জাতির কাছে রাসূল ও নবী প্রেরণ করেছেন। যেমন, আল্লাহ্‌ বলেন :

وَلِكُلِّ قَوۡمٍ هَادٍ (سُورَةُ الرَّعۡدِ : ٧)

প্রত্যেক জাতির জন্যে রয়েছে পথ প্রদর্শক- নবী-রাসূল। (সূরা রাদ : ৭)

Table of Contents

hazrat nuh as, হযরত নূহ আঃ

মানুষের কল্যাণ সাধন করাই ছিল রাসূলগণের জীবনের একমাত্র লক্ষ্য। তাই তাঁরা আজীবন মানুষকে ইহলৌকিক ও পারলৌকিক শান্তির পথ দেখিয়েছেন। কিন্তু অবুঝ ও অজ্ঞান মানুষেরা তাঁদেরকে কষ্ট দিয়েছে। তাঁদের হিতোপদেশে কান লাগায়নি। তাঁদেরকে মিথ্যাবাদী বলেছে। তবু তাঁরা কখনও মনোবল হারাননি।

বিপুল সংখ্যক নবী-রাসূল পৃথিবীতে আগমন করেছেন। তাঁদের সঠিক সংখ্যা আল্লাহ্‌ ছাড়া কেউ জানে না। সর্বপ্রথম নবী ছিলেন মানব জাতির আদি পিতা হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম এবং সর্বশেষ নবী হলেন আমাদের প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তাঁর পরে আর কোন নবী আসেননি এবং আসবেনও না।

বিভিন্ন রেওয়ায়াতে নবীগণের বিভিন্ন সংখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে। কোন রেওয়ায়াতে এক লক্ষ চব্বিশ হাজার, কোন রেওয়ায়াতে এক লক্ষ চৌত্রিশ হাজার এবং কতক রেওয়ায়াতে দুলাখ চব্বিশ হাজার বর্ণনা করা হয়েছে। এসব সংখ্যা অকাট্য নয়। উদ্দেশ্য সম্ভবতঃ আধিক্য বর্ণনা করা, যাতে কম বলা না হয়। তাই নির্দিষ্ট ও সীমিত না করে এভাবে ঈমান আনতে হবে যে, আল্লাহ্‌ তাআলা যত নবী ও রাসূল প্রেরণ করেছেন, আমরা তাঁদের সকলকে সত্য নবী ও সত্য রাসূল বলে স্বীকার করি।

নবী ও রাসূলের পার্থক্য : এ সম্পর্কে তাফসীরে মাআরেফুল কোরআনে বলা হয়েছে- রাসূল ও নবীর সংজ্ঞায় বিভিন্ন উক্তি বর্ণিত আছে। বিভিন্ন আয়াত নিয়ে চিন্তা-ভাবনার পর আমার কাছে যে বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে, তা এই যে, যিনি উম্মতের কাছে নতুন শরীয়ত প্রচার করেন, তিনি রাসূল। আর শরীয়তটি স্বয়ং রাসূলের দিক দিয়ে নতুন হোক, যেমন তাওরাত, কিংবা শুধু উম্মতের দিক দিয়েই নতুন হোক, যেমন হযরত ইসমাঈল (আ.)-এর শরীয়ত। এটা প্রকৃতপক্ষে হযরত ইবরাহীম (আ.)-এর প্রাচীন শরীয়তই ছিল। 

কিন্তু যে জুরহাম গোত্রের প্রতি তিনি প্রেরিত হয়েছিলেন, তাদের কাছে এটা ছিল নতুন শরীয়ত। মোটকথা, উভয়বিধ শরীয়ত যিনি প্রচার করেন, তিনি রাসূল। 

পক্ষান্তরে যাঁর কাছে ওহী আগমন করে, তিনি নবী। তিনি নতুন শরীয়ত প্রচার করুন কিংবা প্রাচীন। উদাহরণত; বনী ইসরাঈলের অধিকাংশ নবী হযরত মূসা (আ.)-এর শরীয়ত প্রচার করতেন। এ থেকে জানা গেল যে, একদিক দিয়ে রাসূল নবীর চেয়ে ব্যাপক এবং অন্যদিক দিয়ে নবী রাসূলের চেয়ে ব্যাপক। 

আবার অনেকেই নবী ও রাসূলকে একই অর্থে গ্রহণ করেন এবং উভয়ের মধ্যে কোন পার্থক্য করেন না। (উমদাতুল-ফিক্হ)

hazrat nuh as, হযরত নূহ আঃ

নবুওয়াত সাধনালব্ধ বিষয় নয় : নবুওয়াত বংশগত কৌলীন্য, মর্যাদা ও গোত্রীয় ঐশ্বর্যের মাধ্যমে অর্জন করা যায় না। এতে জ্ঞানগত ও কর্মগত গুণাবলী অথবা সাধনারও কোন দখল নেই। আল্লাহ্‌ বলেন :

ٱللَّهُ أَعۡلَمُ حَيۡثُ يَجۡعَلُ رِسَالَتَهُۥۗ (سُورَةُ الأَنعَامِ : ١٢٤)

কাকে রেসালত দান করতে হবে, তা আল্লাহ্‌ তাআলাই বেশী জানেন। (সূরা আনআম : ১২৪)

হাজারো গুণ অর্জন করার পরও কেউ গুণের জোরে রিসালাত অর্জন করতে পারে না এবং আল্লাহ্ তাআলার বন্ধুত্বের সুউচ্চ শিখরে আরোহণ করেও কেউ নবী হতে পারে না। 

আল্লাহ্ তাআলার এ বিশেষ অনুগ্রহটি তিনি আপন জ্ঞান ও রহস্য অনুযায়ী বিশেষ বিশেষ বান্দাকে দান করেন। 

তবে এটা জরুরী যে, আল্লাহ্‌ তাআলা যাকে এই পদমর্যাদা দিতে চান, তাকে প্রথম থেকেই এর জন্যে উপযোগী করে গড়ে তুলেন। রাসূল প্রেরণ করা আল্লাহ্ তাআলার উপর ওয়াজিব নয়।

 তিনি মানুষকে যে জ্ঞান ও বিবেক-বুদ্ধি দান করেছেন, আল্লাহ্ তাআলার অস্তিত্ব, তাওহীদ ইত্যাদি মূল বিষয়সমূহ বুঝার জন্যে তাই যথেষ্ট। 

সুতরাং আল্লাহ্ তাআলার অস্তিত্বে ঈমান আনা এবং তাঁকে এক জানা প্রত্যেক বিবেকবান ও বুদ্ধিমান ব্যক্তির উপর ফরয- যদিও তার কাছে কোন রাসূলের দাওয়াত না পৌঁছে। তবে আল্লাহ্‌ তাআলা নেহায়েত অনুগ্রহ ও করুণাবশতই রাসূল প্রেরণকে অপরিহার্য করে নিয়েছেন, যাতে কাফেররা আযাবের সম্মুখীন হয়ে কোন প্রকার ওযর আপত্তি পেশ করার সুযোগ না পায়। সেমতে আল্লাহ্‌ বলেন :

وَمَا كُنَّا مُعَذِّبِينَ حَتَّىٰ نَبۡعَثَ رَسُولٗا (سُورَةُ الإِسۡرَاءِ : ۱٥)

কোন রাসূল না পাঠানো পর্যন্ত আমি কাউকে আযাব দিই না। (সূরা বনী-ইসরাঈল : ১৫)

পয়গাম্বরগণ সকলেই নিষ্পাপ ছিলেন : আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামাতের সর্বসম্মত আকীদা এই যে, পয়গাম্বরগণ পাপ থেকে বিমুক্ত ও পবিত্র। কারণ, তাঁদেরকে গোটা মানব জাতির জন্যে অনুসরণীয় আদর্শ হিসাবে প্রেরণ করা হয়েছিল। 

অতএব যদি তাঁদের দ্বারাও আল্লাহ্ তাআলার ইচ্ছার পরিপন্থী ছোট-বড় কোন পাপকর্ম সম্পন্ন হয়, তবে তাঁদের বাণী ও কার্যাবলীর উপর থেকে বিশ্বাস উঠে যাবে এবং তাঁরা জনগণের আস্থাভাজন থাকবেন না। 

আর যদি জনগণের আস্থা ও বিশ্বাসই না থাকে, তবে দীন ও শরীয়তের স্থান কোথায়? অবশ্য কোরআনের অনেক আয়াতে অনেক রাসূল সম্পর্কে এ ধরনের ঘটনার বর্ণনা আছে, যাতে প্রতীয়মান হয় যে, তাঁদের দ্বারাও ভুল-ত্রæটি সংঘটিত হয়েছে। হযরত আদম (আ.)-এর গন্দম খাওয়ার ঘটনাটি এই শ্রেণীভুক্ত।

এ ধরনের ঘটনাবলী সম্পর্কে উম্মতের সর্বসম্মত অভিমত এই যে, কোন ভল-বুঝাবুঝি ও অনিচ্ছাকৃত কারণে রাসূলগণের দ্বারা এ ধরনের কাজ হতে পারে।

hazrat nuh as, হযরত নূহ আঃ

কোন নবী জেনে-শুনে ইচ্ছাকৃতভাবে আল্লাহ্ তাআলার ইচ্ছার পরিপন্থী কোন কাজ করেননি। এ ধরনের ইজতিহাদত ও অনিচ্ছাকৃত ত্রæটি ক্ষমার যোগ্য। অতএব শরীয়তের পরিভাষায় একে পাপ বলা চলে না। 

আর যেহেতু আল্লাহ্ তাআলার দরবারে নবীগণের স্থান ও মর্যাদা অনেক উচ্চে এবং যেহেতু মহান ব্যক্তিবর্গ দ্বারা ক্ষুদ্র ত্রæটি-বিচ্যুতি সংঘটিত হলেও তাকে বড় মনে করা হয়, সেই কারণে কোরআনে এ ধরনের ঘটনাকে পাপ ও অপরাধ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এগুলো পাপই নয়। (তাফসীরে মাআরেফুল কোরআন)

মানবের রাসূল মানবই হতে পারেন : কাফের ও মুশরিকদের বিশ্বাস ছিল যে, মানব আল্লাহ্ তাআলার রাসূল হতে পারেন না। কেননা, তিনি মানবীয় অভাব ও প্রয়োজনে অভ্যস্ত হবেন। সাধারণ মানুষের উপর তাঁর কোন শ্রেষ্ঠত্ব থাকবে না। 

এটা অনুসরণের পথে একটি বড় বাধা হবে। এই বিশ্বাসের বিপরীতে কোরআনের বক্তব্য এই যে, রাসূলকে যাদের প্রতি প্রেরণ করা হয়, তাঁকে তাদেরই শ্রেণীভুক্ত হতে হবে। তারা মানব হলে রাসূলও মানব হবেন। কেননা, পারস্পরিক মিল ব্যতীত হেদায়াত ও পথ প্রদর্শনের উপকার অর্জিত হয় না। 

ফেরেশ্তারা ক্ষুধা-পিপাসা কি, তা জানে না। কাম-প্রবৃত্তিরও জ্ঞান রাখে না। এমতাবস্থায় মানুষের প্রতি কোন ফেরেশ্তাকে রাসূল করে প্রেরণ করা হলে তিনি মানুষের কাছেও নিজের অনুরূপ কর্ম আশা করবেন এবং মানুষের দুর্বলতা ও অক্ষমতা উপলব্ধি করবেন না। 

সুতরাং সংশোধন ও পথ প্রদর্শনের উপকার তখনই অর্জিত হবে, যখন রাসূল মানব জাতির মধ্য থেকে হবেন। একদিকে তাঁর মধ্যে মানবীয় ভাবাবেগ, কামনা-বাসনাও থাকবে, অপরদিকে এক প্রকার ফেরেশ্তাসুলভ শাসনেরও অধিকারী হবেন, যাতে সাধারণ মানুষের সাথেও সম্পর্ক গভীর হয় এবং ওহী বহনকারী ফেরেশ্তার কাছ থেকে ওহী বুঝে নিয়ে মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারেন।

পৃথিবীতে মানুষের স্থলে যদি ফেরেশ্তারা বসবাস করত, তবে অবশ্য তাদের প্রতি ফেরেশ্তাকেই রাসূল করে প্রেরণ করা হত। তাই আল্লাহ্‌ বলেন :

وَمَا مَنَعَ ٱلنَّاسَ أَن يُؤۡمِنُوٓاْ إِذۡ جَآءَهُمُ ٱلۡهُدَىٰٓ إِلَّآ أَن قَالُوٓاْ أَبَعَثَ ٱللَّهُ بَشَرٗا رَّسُولٗا، قُل لَّوۡ كَانَ فِي ٱلۡأَرۡضِ مَلَٰٓئِكَةٞ يَمۡشُونَ مُطۡمَئِنِّينَ لَنَزَّلۡنَا عَلَيۡهِم مِّنَ ٱلسَّمَآءِ مَلَكٗا رَّسُولٗا (سُورَةُ الإِسۡرَاءِ : ٩٤-٩٥)

অর্থাৎ, হেদায়াত আসার পর মানুষের এই উক্তিই মানুষকে ঈমান আনতে বিরত রাখে : আল্লাহ্‌ কি মানুষকে রাসূল করে প্রেরণ করেছেন? বলে দিন : যদি পৃথিবীতে ফেরেশ্তারাই নিশ্চিন্তে বিচরণ করত, তবে আমি আকাশ থেকে ফেরেশ্তাকেই তাদের কাছে রাসূল করে প্রেরণ করতাম। (সূরা ইসরা : ৯৪-৯৫, তাফসীরে মাআরেফুল কোরআন)

hazrat nuh as, হযরত নূহ আঃ

পয়গাম্বরগণের নাম:

পয়গাম্বরগণের সঠিক সংখ্যা জানা না গেলেও যে সকল প্রসিদ্ধ পয়গাম্বরের নাম কোরআন পাকে ও সহীহ্ হাদীসসমূহে উল্লিখিত হয়েছে, নিম্নে তাদের একটি তালিকা পেশ করা হল :

১. হযরত আদম আলাইহিস সালাম।

২. হযরত শীস আলাইহিস সালাম।

৩. হযরত ইদরীস আলাইহিস সালাম।

৪. হযরত নূহ্ আলাইহিস সালাম।

৫. হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম।

৬. হযরত ইসমাঈল আলাইহিস সালাম।

৭. হযরত ইসহাক আলাইহিস সালাম।

৮. হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালাম।

৯. হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম।

১০. হযরত দাউদ আলাইহিস সালাম।

১১. হযরত সোলায়মান আলাইহিস সালাম।

১২. হযরত মূসা আলাইহিস সালাম।

১৩. হযরত হারুন আলাইহিস সালাম।

১৪. হযরত যাকারিয়্যা আলাইহিস সালাম।

১৫. হযরত ইয়াহ্ইয়া আলাইহিস সালাম।

১৬. হযরত ইলয়াস আলাইহিস সালাম।

১৭. হযরত ইউনুস আলাইহিস সালাম।

১৮. হযরত লূত আলাইহিস সালাম।

১৯. হযরত সালেহ্ আলাইহিস সালাম।

২০. হযরত হুদ আলাইহিস সালাম।

২১. হযরত শোয়াইব আলাইহিস সালাম।

২২. হযরত যুল-কিফল আলাইহিস সালাম

২৩. হযরত উযায়ের আলাইহিস সালাম।

২৪. হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম।

২৫. হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

এঁদের ছাড়া অন্য কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে নবী বা রাসূল বলা দুরস্ত নয়। উপমহাদেশের হিন্দু, বৌদ্ধ ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের অবতার, মুনি, ঋষি ও দেবদেবী সম্পর্কে আমরা খুব বেশী এতটুকু বলতে পারি যে, যদি তাদের আকায়েদ, কার্যাবলী ও শিক্ষা আসমানী শিক্ষার খেলাফ না হয় এবং তারা মানুষের পথ প্রদর্শনের কাজও করে থাকে, তবে সম্ভবতঃ তারাও নবী ও রাসূল ছিলেন।

 কারণ, কোরআনের ভাষ্য অনুযায়ী প্রত্যেক জাতির মধ্যে পয়গাম্বর প্রেরিত হয়েছেন। কিন্তু তাদের নাম দ্বারা তাদেরকে নিশ্চিতরূপে পয়গাম্বর বলা যাবে না। 

যদি তারা আল্লাহ্ তাআলার জ্ঞানে পয়গাম্বর হনও, তবু তাদের শিক্ষা, আকায়েদ ও কার্যাবলী যেহেতু আসমানী শিক্ষা ও আকায়েদের বিপরীত, তাই বলতে হবে এই সব ধর্ম যুগে যুগে বিকৃত হয়ে তাদের আসল রূপ হারিয়ে ফেলেছে। এখন যা আছে, তা নিছক কাল্পনিক ও আমলের অযোগ্য। (উমদাতুল-ফিক্হ)

আজকাল আমাদের দেশে খ্রীস্টান মিশনারীরা গ্রামে-গঞ্জে ও হাটে-বাজারে জোরদার প্রচার কার্য চালাচ্ছে। তারা তাওরাত ও ইনজীল থেকে বিভিন্ন নবীর বিভিন্ন অবস্থা ও কাহিনী পুস্তিকাকারে পরিবেশন করে। বলা বাহুল্য যে, এগুলো সব বিকৃত তাওরাত ও ইনজীলের বিকৃত কাহিনী ছাড়া আর কিছুই নয়। 

সরলপ্রাণ মুসলমানগণ এসব বিকৃত কাহিনী পড়ে নবী ও রাসূলগণ সম্পর্কে ভ্রান্ত বিশ্বাস পোষণ করতে শুরু করেছে। তাই পবিত্র কোরআন ও সহীহ্ হাদীসের আলোকে নবী-রাসূলগণের কিছু কিছু কাহিনী পাঠকবর্গের সামনে তুলে ধরা আবশ্যক মনে করি।

hazrat nuh as, হযরত নূহ আঃ

হযরত নূহ্ (আ.)-এর কাহিনী

আল্লাহ্‌ তাআলা হযরত নূহ্ (আ.)-কে সাড়ে নয় বছরের দীর্ঘ জীবন দান করেন। সাথে সাথে আপন সম্প্রদায়কে আল্লাহ্ তাআলার দিকে দাওয়াত দেওয়া ও সুপথে পরিচালিত করার এক অদম্য স্পৃহা ও অসাধারণ উৎসাহ-উদ্দীপনাও দান করেন। 

তিনি সারাজীবন অক্লান্ত পরিশ্রম ও নিষ্ঠা সহকারে নিজের জাতিকে তাওহীদ ও সত্য ধর্মের প্রতি আহ্বান জানান। 

এ ব্যাপারে বিভিন্ন সময়ে কওমের সাথে তাঁর যে কথাবার্তা হয় এবং তিনি যে মর্মস্পর্শী ভঙ্গিমায় তাদের ওযর আপত্তির জওয়াব দেন, তা কোরআন পাকের সূরা হুদ থেকে নিম্নে উদ্ধৃত করা হল :

আল্লাহ্‌ বলেন : আমি নূহ্কে তার কওমের প্রতি এ পয়গাম দিয়ে প্রেরণ করেছি যে, তোমরা একমাত্র আল্লাহ্‌ ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করো না। 

তোমরা ওদ্দ, সূয়া, ইয়াগুছ, ইয়াউক, নসর ইত্যাদি হাতে গড়া যেসব মূর্তিকে উপাস্য মনে করছ, তাদেরকে বর্জন কর। সেমতে হযরত নূহ্ (আ.) কওমের সামনে উপস্থিত হয়ে বললেন : তোমরা যদি আল্লাহ্‌ ছাড়া অন্য মূর্তিদের উপাসনা ত্যাগ না কর, তবে আমি তোমাদের ব্যাপারে এক ভীষণ যন্ত্রণাদায়ক দিনের আযাবের আশংকা করি।

উত্তরে কাফের প্রধানরা বলল : আপনি যে নিজেকে আল্লাহ্ তাআলার নবী বলে দাবী করছেন, আমাদের মন তাতে সায় দিচ্ছে না। আমরা তো আপনাকে আমাদের মত মানুষ ব্যতীত কিছু মনে করি না। আর মানুষ আল্লাহ্ তাআলার নবী হতে পারে, তা আমাদের বোধগম্য নয়। 

কিছু সংখ্যক লোকের স্বীকৃতি ও আনুগত্যকে যদি নবুওয়াতের সত্যতার প্রমাণ স্বরূপ পেশ করা হয়, তবে তাও আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। 

কারণ, আমাদের মধ্যে যারা সমাজে হতমান, স্থলবুদ্ধি-সম্পন্ন ব্যক্তি, তাদের ছাড়া অন্য কাউকে তো আপনার আনুগত্য করতে দেখি না। তারাও কেবল ভাসা ভাসা আনুগত্য করে। 

কেননা, সুষ্ঠু বিচার-বুদ্ধি ছাড়া যে আনুগত্য করা হয়, তার শিকড় গভীরে যেতে পারে না। কাজেই এহেন লোকদের স্বীকৃতি ও আনুগত্য আপনার নবুওয়াতের প্রমাণ হতে পারে না। 

সুতরাং আমরা আপনাদের সকলকে মিথ্যাবাদী মনে করি। হযরত নূহ্ (আ.) বলেন : হে আমার জাতি! আমার নবুওয়াত তোমাদের বোধগম্য নয় বলে তোমরা বলছ। 

আচ্ছা বল তো, আমি যদি আমার প্রভুর পক্ষ হতে স্পষ্ট দলীলের উপর কায়েম থাকি, আর তিনি যদি আমাকে নবুওয়াত দান করে থাকেন, তার পরেও তোমাদের বোধগম্য না হলে তাতে আমি কি করতে পারি? তোমরা পছন্দ না করলেও কি আমি জোর করে আমার দাবী তোমাদের উপর চাপিয়ে দিব? না, তা আমি করব না।

hazrat nuh as, হযরত নূহ আঃ

তিনি আরও বললেন : হে আমার সম্প্রদায়! চিন্তা করে দেখ তো, নবুওয়াতের মিথ্যা দাবী করলে তাতে আমার কোন স্বার্থ অবশ্য থাকত। আমি হয়তো তোমাদের ধন-সম্পদে ভাগ বসাতাম। 

কিন্তু তোমরা তো ভালো করেই জান, আমি নবুওয়াত প্রচারের বিনিময়ে তোমাদের কাছে ধন-সম্পদ ইত্যাদি কিছুই চাই না। আমার পারিশ্রমিক একমাত্র আল্লাহ্ তাআলার দায়িত্বে রয়েছে।

আশা করি, পরকালে তিনি তা দান করবেন। এতদসত্তে¡ও তোমরা আমাকে মিথ্যাবাদী মনে করছ কেন? আমার দাবীকে মিথ্যা প্রমাণ করার কোন যুক্তি তোমাদের কাছে নেই। 

আর দরিদ্র শ্রেণীর ঈমান আনাকে তোমরা নিজেদের ঈমান আনার পথে অন্তরায় মনে করছ এবং স্পষ্টত অথবা ইঙ্গিতে চাইছ যে, আমি তাদেরকে আমার কাছ থেকে অনেক দূরে সরিয়ে দেই।

জেনে রাখ! আমি ঈমানদারদেরকে আমার কাছ থেকে সরিয়ে দিতে পারি না। কারণ, তারা অবশ্যই একদিন সাদরে ও সসম্মানে তাদের পালনকর্তার সাক্ষাৎ লাভ করবে। 

অতএব শাহী দরবারের প্রিয়পাত্রদেরকে কেউ তাড়িয়ে দেয় কি? বরং অবাঞ্ছিত আচরণ ও অসংলগ্ন কথাবার্তার কারণে আমি তোমাদেরকেই অজ্ঞ দেখতে পাচ্ছি। 

হে আমার সম্প্রদায়! তোমাদের কথামত আমি যদি তাদেরকে তাড়িয়ে দেই, তবে তোমাদের মধ্যে কে আমাকে আল্লাহ্ তাআলার শাস্তি থেকে রক্ষা করবে? তোমাদের সেই ক্ষমতা নেই। 

আমি তো কোন মিথ্যা, অবাস্তব ও সস্তা দাবী করছি না। আমি একথা বলি না যে, আমার কাছে আল্লাহ্ তাআলার ধন-ভাÐার রয়েছে এবং আমি গায়েবের খবর জানি। 

আর আমি একথাও বলি না যে, আমি একজন ফেরেশ্তা। আর দরিদ্র ঈমানদার, যারা তোমাদের দৃষ্টিতে হীন, তাদের সম্পর্কে আমি বলতে পারি না যে, তারা ঈমানে আন্তরিক নয়- ফলে তারা কল্যাণ পাবে না। 

তাদের অবস্থা আল্লাহ্‌ ভালভাবেই জানেন। হয়তো তাদের পূর্ণ আন্তরিকতা আছে। কাজেই আমি তাদের ব্যাপারে অনধিকার চর্চা করব না। এরূপ করলে আমি অন্যায়কারীদের মধ্যে পরিগণিত হব।

hazrat nuh as, হযরত নূহ আঃ

হযরত নূহ্ (আ.) যখন তাদের সকল আপত্তির সুষ্ঠু জওয়াব দিলেন এবং তারা প্রত্যুত্তর দিতে অক্ষম হল, তখন তারা অনন্যোপায় হয়ে বলতে লাগল : হে নূহ্! তর্ক-বিতর্ক অনেক হয়েছে- আর নয়। 

এবার সত্যবাদী হলে যে আযাবের হুমকি দিচ্ছেন, সেই আযাব নিয়ে আসুন। হযরত নূহ্ (আ.) এ কথারও জওয়াব দিলেন। বললেন : আযাব নিয়ে আসার ক্ষমতা বা অধিকার আমার নেই।

 আমার কর্তব্য ছিল কেবল তোমাদেরকে জানিয়ে দেওয়া, শুনিয়ে দেওয়া ও সতর্ক করা। 

আমি যথাসাধ্য এই কর্তব্য পালন করেছি। প্রতিশ্রæত আযাব তোমাদের কাছে আল্লাহ্‌ তাআলাই আনয়ন করবেন। তখন তোমরা সেই আযাব ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। 

আর আমি তোমাদের অকৃত্রিম হিতাকাক্সক্ষীরূপে মমতা ও দরদের সাথে তোমাদেরকে সুপথে পরিচালনা করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু আমি যত হিতাকাক্সক্ষীই হই না কেন, যত আশাই করি না কেন, তা তোমাদের জন্য ফলপ্রসূ হবে না, যদি আল্লাহ্‌ তোমাদেরকে পথহারা করতে চান।

তোমরা তো ধৃষ্টতা ও হঠকারিতার বশবর্তী হয়ে তাঁর বিধি-নিষেধ লঙ্ঘন করে চরম অপরাধী সাব্যস্ত হচ্ছ। তিনি এর প্রতিবিধান করবেন বৈ কি!

সুদীর্ঘকাল উপদেশ দান করা সত্তে¡ও যখন দেখা গেল যে, কোন ফল হচ্ছে না, তখন হযরত নূহ্ (আ.)-এর প্রতি এই মর্মে ওহী আগমন করল, আপনার কওমের মধ্যে যারা ঈমান আনার যোগ্য ছিল, তারা ইতোমধ্যেই ঈমান এনেছে। ভবিষ্যতে আর কেউ ঈমান আনবে না।

উপরন্তু হযরত নূহ্ (আ.) কওমের পক্ষ থেকে নির্যাতন-নিপীড়নের সম্মুখীন হলেন। তাঁকে লক্ষ্য করে প্রস্তর নিক্ষেপ করা হল। তিনি অনেক সময় রক্তাক্ত হয়ে বেহুশ হয়ে পড়তেন।

এভাবে নির্যাতন সয়ে সয়ে তিনি এক পুরুষের পরে দ্বিতীয় পুরুষকে, অতঃপর তৃতীয় পুরুষকে ঈমান আনার আশায় দাওয়াত দিচ্ছিলেন। কিন্তু শতাব্দীর পর শতাব্দী অতিবাহিত হওয়া সত্তে ও তারা যখন ঈমান আনল না, তখন তিনি আল্লাহ্ তাআলার দরবারে এই বলে ফরিয়াদ করলেন :

قَالَ رَبِّ إِنِّي دَعَوۡتُ قَوۡمِي لَيۡلٗا وَنَهَارٗا، فَلَمۡ يَزِدۡهُمۡ دُعَآءِيٓ إِلَّا فِرَارٗا (سُورَةُ نُوحٍ : ٥-٦)

আমি আমার জাতিকে দিবারাত্রি দাওয়াত দিয়েছি। কিন্তু আমার দাওয়াত কেবল তাদের পলায়নের প্রবণতাকেই বৃদ্ধি করেছে। (সূরা নূহ্ : ৫-৬)

قَالَ رَبِّ ٱنصُرۡنِي بِمَا كَذَّبُونِ (سُورَةُ المُؤۡمِنُونَ : ٢٦)

হে রব! আমার প্রতিশোধ গ্রহণ করুন। তারা আমার প্রতি মিথ্যা আরোপ করেছে। 

(সূরা মুমিনুন : ২৬)

জওয়াবে আল্লাহ্‌ তাআলা হযরত নূহ্ (আ.)-কে আদেশ করলেন : হে নূহ্! কাফেরদের দুষ্কর্মের কারণে আপনি দুঃখিত হবেন না।

অবাধ্যতার কারণে আমি অচিরেই তাঁদেরকে ডুবিয়ে মারার ফায়সালা করেছি। এতদুদ্দেশ্যে এক মহাপ্লাবন সমাগত-প্রায়। অতএব আপনি উক্ত মহাপ্লাবন থেকে আত্মরক্ষার্থে আমার তক্তাবোধনে ও আমারই নির্দেশ অনুসারে একটি নৌকা তৈরি করুন, যার মধ্যে আরোহণ করে আপনি পরিবারবর্গ ও ঈমানদারগণসহ নিরাপদে থাকবেন।

আর মনে রাখবেন, কাফেরদের রক্ষার ব্যাপারে আমাকে কিছু বলবেন না। কারণ, তাদের সম্পর্কে চড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে। তারা সকলেই নিমজ্জিত হবে। কাজেই তাদের জন্যে সুপারিশ করা নিরর্থক। অতঃপর হযরত নূহ্ (আ.) নৌকা তৈরির উপকরণাদি সংগ্রহ করলেন এবং তিনি নিজে অথবা কারিগরের সাহায্যে নৌকা তৈরি করতে লাগলেন।

তাঁর কওমের নেতৃস্থানীয়রা যখনই তাঁর কাছ দিয়ে যেত, ডাঙ্গায় নৌকা তৈরি করতে দেখে এবং মহাপ্লাবনের কথা শুনে তাঁকে এই বলে ঠাট্টা-বিদ্রƒপ করত : দেখ! ধারে-কাছে কোথাও পানির নামগন্ধ নেই, অথচ তিনি কিনা পানিতে ডুবে মরার ভয়ে নৌকা তৈরির অর্থহীন প্রচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছেন।

hazrat nuh as, হযরত নূহ আঃ

তখন হযরত নূহ্ (আ.) উত্তরে বলতেন : তোমরা যেমন আমাদের উপহাস করছ, তেমনি আমরাও তোমাদের উপহাস করছি।

অর্থাৎ, আযাব তোমাদের এত নিকটবর্তী হওয়া সত্তে¡ও তোমরা তাকে উপহাস করছ। তোমাদের অবস্থা দেখে আমারও হাসি পায়। অচিরেই তোমরা জানতে পারবে যে, লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি কার উপর অবতীর্ণ হয়।

আল্লাহ্‌ বলেন : অবশেষে যখন আমার আযাবের হুকুম এসে পৌঁছল এবং প্লাবনের নির্ধারিত সংকেত স্বরূপ ভপৃষ্ঠ থেকে পানি উথলিয়ে উঠতে লাগল, আকাশ থেকে বর্ষণ আরম্ভ হল, তখন আমি নূহ্কে বললাম : মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় অথচ পানির মধ্যে জীবিত থাকতে অক্ষম এমন সকল প্রকার জীব থেকে একটি পুরুষ ও একটি স্ত্রী মোট দুটি করে নৌকায় তুলে নিন। 

আর যাদের সম্পর্কে ফায়সালা হয়ে গেছে, তাদেরকে বাদ দিয়ে আপনার পরিজনবর্গ ও ঈমানদারদেরকে নৌকায় তুলুন। বলা বাহুল্য যে, অতি অল্প সংখ্যক লোকই তাঁর সাথে ঈমান এনেছিল- ফলে তারাই নৌকায় আরোহণের সুযোগ পেল।

হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নৌকায় আরোহণকারীদের সর্বমোট সংখ্যা ছিল ৮০ জন। তাদের মধ্যে হযরত নূহ্ (আ.)-এর তিন পুত্র হাম, সাম, ইয়াফেস ও তাদের তিন স্ত্রীও ছিল। হযরত নূহ্ (আ.)-এর চতুর্থ পুত্র কেনআন কাফেরদের দলভুক্ত থাকায় সে নৌকায় আরোহণ করল না।

হযরত নূহ্ (আ.) নৌকায় আরোহণ করে স্বীয় অনুগামীদেরকে বললেন : তোমরা সকলেই এতে আরোহণ কর। ডুবে যাওয়ার কোন আশংকা করো না। কারণ, এর গতি ও এর স্থিতি আল্লাহ্ তাআলার নামে। বান্দাদের পাপ-তাপ তাদের ডুবাতে চাইলেও আমার পালনকর্তা অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও করুণাময়। তিনি আপন রহ্মতে পাপ মার্জনা করেন ও হেফাযত করেন।

মোটকথা, সকলেই নিশ্চিন্তে নৌকায় আরোহণ করল। ইতোমধো পানি অত্যন্ত বৃদ্ধি পেল এবং নৌকাটি তাদের বহন করে পর্বতপ্রমাণ তরঙ্গমালার মধ্যে হেলে-দুলে চলতে লাগল। 

হযরত নূহ্ (আ.)-এর চতুর্থ পুত্র কেনআন নৌকা থেকে আলাদা এক জায়গায় দাঁড়িয়ে ছিল। তিনি শেষবারের মত তাকে ডেকে বললেন, প্রিয় বৎস! ঈমান এনে সত্তর আমাদের সাথে নৌকায় আরোহণ কর, কাফেরদের সঙ্গে থেকো না। 

থাকলে তোমার সলিল সমাধি হবে। অবাধ্য পুত্র বলল : আমি এক্ষণি কোন উঁচু পাহাড়ের শীর্ষে উঠে যাব। আর তা আমাকে পানি থেকে রক্ষা করবে। 

hazrat nuh as, হযরত নূহ আঃ

বস্তুতঃ তখন ছিল প্লাবনের প্রাথমিক অবস্থা। পর্বত-শীর্ষে তখনও পানি পৌঁছেনি। হযরত নূহ্ (আ.) বললেন : আজকের দিনে আল্লাহ্ তাআলার আযাব থেকে কারও পরিত্রাণ নেই। তবে আল্লাহ্‌ যাকে রক্ষা করবেন, তার কথা আলাদা।

মোটকথা, হতভাগা কোনআন তখনও ঈমান আনল না। প্রবল বেগে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছিল। এমন সময় পিতা ও পুত্র উভয়ের মাঝে এক বিশাল তরঙ্গ এসে আড়াল হয়ে গেল- ফলে কেনআনও অন্যান্য কাফেরের অনুরূপ সলিল সমাধি লাভ করল।

সমস্ত কাফের নিমজ্জিত হওয়ার পর আল্লাহ্‌ তাআলা নির্দেশ দিলেন, হে পৃথিবী! তোমার উপরস্থিত সব পানি গিলে ফেল। 

আর হে আকাশ! বর্ষণ বন্ধ কর। উভয় নির্দেশ তৎক্ষণাৎ পালিত হল। পানি কমে গেল এবং যা হওয়ার ছিল, তা হয়ে গেল। নৌকা এসে জুদী পাহাড়ে ভিড়ল। অতঃপর ঘোষণা করা হল, কাফেররা আল্লাহ্ তাআলার রহ্মত থেকে অনেক দূরে।

জুদী পাহাড়ে নৌকা নোঙ্গর করার কয়েক দিন পর যখন পানি শুকিয়ে গেল, তখন হযরত নূহ্ (আ.)-কে বলা হল : হে নূহ্! এখন জুদী পাহাড় থেকে সমতল ভমিতে অবতরণ করুন। 

আমার পক্ষ থেকে আপনার উপর ও আপনার সঙ্গীদের উপর নিরাপত্তা ও বরকত নাযিল হবে।

পরবর্তী যুগে এদের বংশধরদের মধ্যে অনেক লোক কাফের হবে, যাদেরকে আমি পার্থিব জীবনে সাময়িকভাবে উপকৃত হতে দিব। এরপর তাদের উপর পরকালে আমার ভীষণ আযাব আপতিত হবে। 

(বায়ানুল-কোরআন)

Baseer

Baseer হচ্ছে একটি কুরআন ও হাদিস ভিতিক সহিহ ইসলামিক পোর্টাল। যেখানে এক ঝাঁক আলেম কাজ করছেন ইসলাম সম্পর্কে মানুষ কে সঠিক তথ্য ও উপাত্ত দেয়ার উদ্দেশ্যে। আমাদের পধান লখ্য উদ্দেশ্য হলো, কুরআন ও সুন্নাহ কে নিয়ে সঠক ভাবে রিসার্চ করে দ্বীনের খেদমত করা।

Previous Post Next Post