আম্বিয়ায়ে কেরাম আলাইহিমুস্
সালাম - ৪র্থ পর্ব
আহমদ বদরুদ্দীন খান
(সম্পাদক : মাসিক মদীনা)
Table of Contents
হযরত ইউসুফ (আ.)—এর কাহিনী - ১ম পর্ব
কোন কোন রেওয়ায়াতে বলা হয়েছে : মদীনার ইয়াহুদীরা রাসূলুল্লাহ্ (সা.)—কে পরীক্ষা করার জন্যে বলেছিল, যদি আপনি সত্যই আল্লাহ্ তা’আলার নবী হন, তবে বলুন, ইয়াকূব পরিবার সিরিয়া থেকে মিসরে কেন স্থানান্তরিত হয়েছিল? হযরত ইউসুফ (আ.)—এর ঘটনা কি ছিল? প্রত্যুত্তরে আল্লাহ্ তা’আলা সূরা ইউসুফ নাযিল করে পূর্ণ কাহিনী বর্ণনা করে দেন।
এটা নিঃসন্দেহে রাসূলুল্লাহ্ (সা.)—এর নবুওয়াতের একটি বড় প্রমাণ। কেননা, তিনি ছিলেন নিরক্ষর এবং আজীবন মক্কায় বসবাসকারী। তিনি কারও কাছ থেকে শিক্ষাও গ্রহণ করেননি এবং কোন গ্রন্থও পাঠ করেননি।
এতদসত্ত্বেও তাওরাতে বর্ণিত আদ্যোপান্ত
কাহিনী তিনি বিশুদ্ধরূপে বর্ণনা করে দেন। বরং এমন কিছু বিষয়ও তিনি বর্ণনা করেন, যেগুলো
তাওরাতে উল্লিখিত ছিল না। নিম্নে কোরআনে বর্ণিত হযরত ইউসুফ (আ.)—এর কাহিনী উদ্ধৃত করা হল :
সিরিয়ায় বসবাসকারী হযরত ইয়াকূব (সা.)—এর বার জন পুত্র সন্তান ছিল। তাদের
মধ্যে দশজন ছিল হযরত ইউসুফ (আ.)—এর বৈমাত্রেয় ভাই এবং ‘বিনইয়ামীন’ নামে একজন ছিল সহোদর ছোট ভাই। বৈমাত্রেয় ভাইরা ছিল জ্যেষ্ঠ। আর তাঁরা
দু’ভাই
ছিলেন কনিষ্ঠ।
পিতা—পুত্ররা সকলেই যখন সিরিয়ায় সুখে—স্বাচ্ছন্দ্যে কালাতিপাত করছিলেন, তখন একদিন ইউসুফ একটি স্বপ্ন দেখে
পিতাকে বললেন : হে আমার পিতা! আমি স্বপ্নে এগারটি নক্ষত্র, সূর্য ও চন্দ্রকে দেখেছি।
তারা সকলেই আমাকে সেজদা করছে। পিতা হযরত
ইয়াকুব (আ.) বললেন : শোন! এ স্বপ্ন তোমার ভাইদের কাছে বর্ণনা করো না। কারণ, তারা নবী
বংশের সন্তান।
এ স্বপ্নের ব্যাখ্যা তাদের বিলক্ষণ জানা
আছে যে, এগারটি নক্ষত্র হচ্ছে এগারজন ভাই, আর সূর্য হচ্ছে পিতা এবং চন্দ্র মাতা। আর
সেজদা করার তাৎপর্য হচ্ছে তোমার প্রতি তাদের অনুগত ও আজ্ঞাবহ হওয়া। অতএব এ স্বপ্ন
তাদের কাছে বর্ণনা করলে তারা তোমার অনিষ্ট সাধনে তৎপর হয়ে উঠবে। কারণ, শয়তান মানুষের
প্রকাশ্য শত্রু। সে তোমার ভাইদের মনে কুমন্ত্রণা জাগিয়ে তুলবে।
আল্লাহ্ তা’আলা তোমাকে নবুওয়াতের আরেক সম্মানের
জন্যে মনোনীত করবেন। তোমাকে স্বপ্নের ব্যাখ্যা সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞান দান করবেন এবং
অন্যান্য আরও নেয়ামত দিয়ে তোমার প্রতি ও আমার সন্তানদের প্রতি স্বীয় অনুগ্রহ পূর্ণ
করবেন।
ইউসুফ ছিলেন হযরত ইয়াকুব (আ.)—এর দ্বিতীয়া স্ত্রী বাহালের গর্ভজাত
পুত্র। তিনি এবং তার অনুজ “বিনইয়ামীন” অল্পবয়স্ক বালক ছিলেন বিধায় হযরত ইয়াকুব (আ.) তাদের প্রতি স্বভাবতই
একটু বেশী স্নেহ—মমতা প্রদর্শন করতেন।
আর এটাই বৈমাত্রেয় ভাইদের মনে ঈর্ষার
কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এটাও সম্ভবপর যে, তারা কোনরূপে ইউসুফের স্বপ্নের বিষয়ও অবগত হয়েছিল,
যার দরুন তারা ইউসুফের বিরাট মাহাত্ম্যের কথা টের পেয়ে তার প্রতি হিংসাপরায়ণ হয়ে
উঠল।
একদিন তারা পরস্পরে বলাবলি করল: আমাদের
পিতা আমাদের তুলনায় ইউসুফ ও বিনইয়ামীনকে অধিক মহব্বত করেন। অথচ আমরা দশজন এবং তাদের
জ্যেষ্ঠ হওয়ার কারণে গৃহস্থালীর কাজ—কর্ম আমরাই আনজাম দিচ্ছি।
তারা উভয়েই ছোট বালক বিধায় এসব কাজ করতে
পারে না। অতএব আমাদের পিতার উচিত এ বিষয়টি অনুধাবন করা এবং আমাদেরকে অধিক মহব্বত করা।
কিন্তু তিনি প্রকাশ্যে অবিচার করে যাচ্ছেন।
তাই তোমরা হয় ইউসুফ কে হত্যা কর, না হয় এমন দূরদেশে নির্বাসিত কর, যেখান থেকে আর ফিরে
আসতে না পারে।
কেউ কেউ বলল: না, হত্যা করে কাজ নেই। যদি
কিছু করতেই হয়, তবে তাকে কূপের গভীরে এমন জায়গায় নিক্ষেপ কর, যেখানে সে জীবিত থাকবে
এবং কোন পথিক এসে হয়ত তাঁকে উঠিয়ে নিয়ে যাবে।
সেমতে একদিন ভাইয়েরা পিতার কাছে এসে বলতে
লাগল: আব্বাজান! ব্যাপার কি? আপনি ইউসুফ সম্পর্কে আমাদের প্রতি আস্থা রাখেন না, অথচ
আমরা তার পুরোপুরি হিতাকাক্সক্ষী। আগামী কাল আপনি তাকে আমাদের সাথে প্রমোদ—ভ্রমণে পাঠিয়ে দিন, যাতে সে—ও স্বাধীনভাবে পানাহার ও খেলাধুলা
করতে পারে। আমরা সকলেই তার পুরোপুরি দেখাশুনা করব।
উত্তরে হযরত ইয়াকুব (আ.) বললেন: তাকে
প্রেরণ করা আমি দু’কারণে পছন্দ করি না। প্রথমতঃ এ নয়নের মণি আমার সামনে না থাকলে আমি শান্তি
পাই না। দ্বিতীয়তঃ আশংকা আছে যে, জঙ্গলে তোমাদের অসাবধানতার মুহূর্তে তাকে বাঘে খেয়ে
ফেলতে পারে।
হযরত ইয়াকূব (আ.)—এর একথা শুনে ভাইয়েরা বলল: আপনার
এ ভয়—ভীতি
অমূলক। আমাদের দশজনের শক্তিশালী দল তার হেফাযতের জন্যে বিদ্যমান থাকবে। এরপরও যদি ব্যাঘ্র
তাকে খেয়ে ফেলে, তবে আমাদের অস্তিত্বই নিষ্ফল হয়ে যাবে। আমরা পৃথিবীতে কোন কাজেরই
থাকব না।
ব্যাপারটি আর না বাড়িয়ে হযরত ইয়াকুব
(আ.) অনুমতি দিয়ে দিলেন। কিন্তু ভাইদের কাছ থেকে এমর্মে অঙ্গীকারও নিলেন, যাতে তার
কোনরূপ কষ্ট না হয়।
রওয়ানা হওয়ার সময় পিতাকে দেখানোর জন্যে
তাঁর সামনে ইউসুফকে কাঁধে তুলে নিল এবং পালাক্রমে সবাই তুলতে লাগল। কিছু দূর পর্যন্ত
হযরত ইয়াকুব (আ.)—ও তাদেরকে বিদায় দেওয়ার জন্যে এগিয়ে গেলেন।
ইমাম কুরতুবী ইতিহাসের বরাত দিয়ে উল্লেখ
করেন, তারা যখন হযরত ইয়াকূব (আ.)—এর দৃষ্টির আড়ালে চলে গেল, তখন ইউসুফ যে ভাইয়ের কাধে ছিলেন, সে তাকে
মাটিতে ফেলে দিল। তখন ইউসুফ পায়ে হেঁটে চলতে লাগলেন। কিন্তু অল্পবয়স্ক হওয়ার কারণে
তাদের সাথে সাথে দৌড়াতে অক্ষম হয়ে অন্য একজন ভাইয়ের আশ্রয় নিলেন। সে কোনরূপ সহানুভূতি
প্রদর্শন না করায় তৃতীয়, চতুর্থ এমনিভাবে প্রত্যেক ভাইয়ের কাছে সাহায্য চাইলেন।
কিন্তু সবাই উত্তর দিল: তুই যে এগারটি
নক্ষত্র ও চন্দ্র—সূর্যকে সেজদা করতে দেখেছিস, তাদেরকে ডাক। তারাই তোর সাহায্য করবে।
অবশেষে ইউসুফ ইহুদাকে বললেন: আপনি জ্যেষ্ঠ।
আপনিই আমার শৈশব ও পিতার দুর্দশার কথা চিন্তা করে দয়ার্দ্র হোন। আপনি সেই অঙ্গীকার
স্মরণ করুন, যা পিতার সাথে করেছিলেন। একথা শুনে ইহুদার মনে দয়ার সঞ্চার হল। সে বলল:
ইউসুফ, চিন্তা করো না। যতক্ষণ আমি জীবিত আছি, এরা তোমাকে কোন কষ্ট দিতে পারবে না।
অতঃপর ইহুদা অন্যান্য ভাইকে সম্বোধন করে
বলল : নিরপরাধকে হত্যা করা মহাপাপ। আল্লাহ্ কে ভয় কর এবং এ বালককে তার পিতার কাছে
পৌঁছিয়ে দাও।
তবে তার কাছ থেকে অঙ্গীকার নিয়ে নাও যে,
পিতার কাছে তোমাদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করবে না। ভাইয়েরা বলল: আমরা জানি তোমার উদ্দেশ্য
কি।
তুমি পিতার অন্তরে নিজের মর্যাদার আসন
প্রতিষ্ঠিত করতে চাও। শুনে রাখ, যদি তুমি আমাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে প্রতিবন্ধক হও, তবে
আমরা তোমাকেও হত্যা করব।
ইহুদা দেখল, নয় ভাইয়ের বিপরীতে সে একা
কিছুই করতে পারবে না। তাই সে বলল : তোমরা যদি এ বালককে নিপাত করতেই মনস্থ করে থাক,
তবে আমার কথা শুন। নিকটেই একটি প্রাচীন কূপ আছে। এতে অনেক ঝোপ—জঙ্গল গজিয়েছে।
সাপ, বিচ্ছু ও নানা রকমের হিংস্র প্রাণী এখানে বাস করে। তোমরা ইউসুফকে ঐ কূপে ফেলে দাও— যদি কোন সর্প ইত্যাদি দংশন করে তাকে শেষ করে দেয়, তবে তোমাদের উদ্দেশ্যও সিদ্ধ হবে এবং নিজ হাতে হত্যা করার দোষ থেকেও বেঁচে যাবে। পক্ষান্তরে যদি সে জীবিত থাকে, তবে হয়তো কোন কাফেলা এখানে আসবে এবং পানির জন্য কূপে বালতি ফেলবে— ফলে সে বের হয়ে আসবে। তারা তাকে সাথে করে অন্য কোন দেশে পৌঁছিয়ে দিবে। এমতাবস্থায়ও তোমাদের উদ্দেশ্য হাসিল হবে।
এ প্রস্তাবে ভাইয়েরা সকলেই একমত হল। সেমতে
তারা যখন তাকে কূপে নিক্ষেপ করতে উদ্যত হল, তখন তিনি কূপের প্রাচীর জড়িয়ে ধরলেন।
ভাইয়েরা তার গায়ের জামা খুলে তা দ্বারা হাত বেঁধে দিল। তখন ইউসুফ পুনরায় তাদের কাছে
দয়া ভিক্ষা চাইলেন। কিন্তু তখনও সেই একই উত্তর পাওয়া গেল: যে এগারটি নক্ষত্র তোকে
সেজদা করে, তাদেরকে ডাক দে। তারাই তোর সাহায্য করবে।
অতঃপর একটি বালতিতে রেখে তাকে কূপে ছাড়তে
লাগল। মাঝপথে যেতেই উপর থেকে রশি কেটে দিল। আল্লাহ্ তা’আলা স্বয়ং ইউসুফের হেফাযত করলেন।
পানিতে পড়ার কারণে তিনি কোনরূপ আঘাত পাননি। নিকটেই একখণ্ড ভাসমান প্রস্তর দৃষ্টিগোচর
হল। তিনি সুস্থ ও বহাল তবিয়তে তার উপর বসে গেলেন।
কোন কোন বর্ণনায় আছে, হযরত জিবরাঈল (আ.)
আল্লাহ্ তা’আলার আদেশে তাকে প্রস্তরখণ্ডের উপর বসিয়ে দেন।
ইউসুফ তিন দিন কূপে অবস্থান করলেন। ইহুদা
প্রত্যহ গোপনে তার জন্যে খাবার ও পানি আনত এবং বালতির সাহায্যে তাঁর কাছে পৌঁছিয়ে
দিত। এদিকে ইউসুফ ভ্রাতারা তাকে কূপে ফেলে সন্ধ্যায় ক্রন্দন করতে করতে এবং চোখের পানি
ফেলতে ফেলতে বাড়ীতে পৌঁছল।
হযরত ইয়াকূব (আ.) ক্রন্দনের শব্দ শুনে
বাইরে এলেন এবং জিজ্ঞাসা করলেন: ব্যাপার কি? তোমাদের ছাগপালের উপর কেউ আক্রমণ করেছে
কি? ইউসুফ কোথায়? ভাইয়েরা কাঁদতে কাঁদতে বলল: আব্বা, আমরা ইউসুফকে আসবাব পত্রের কাছে
রেখে সকলেই দৌড় প্রতিযোগিতায় নেমেছিলাম। ইতোমধ্যে ব্যাঘ্র এসে ইউসুফকে খেয়ে ফেলেছে।
এখন আমরা যত সত্য কথাই বলি, আপনি আমাদের কথা বিশ্বাস করবেন না।
ইউসুফের ভ্রাতারা তার একটি জামায় কৃত্রিম
রক্ত লাগিয়ে এনেছিল, যাতে পিতার মনে বিশ্বাস জন্মে যে, ব্যাঘ্রেই তাকে খেয়ে ফেলেছে।
কিন্তু আল্লাহ্ তাদের মিথ্যা ফাঁস করে
দেয়ার জন্য তাদেরকে একটি জরুরী বিষয় থেকে গাফেল করে দিয়েছিলেন। তারা যদি রক্ত লাগানোর
সাথে সাথে জামাটিও ছিন্ন—বিচ্ছিন্ন করে দিত, তবে তাদের দাবী প্রমাণিত হতে পারত। কিন্তু তারা অক্ষত
ও সমস্ত জামায় ছাগল ছানার রক্ত লাগিয়ে দিয়ে পিতাকে ধোকা দিতে চাইল।
হযরত ইয়াকুব (আ.) অক্ষত জামা দেখে বললেন:
বাছারা, এ ব্যাঘ্র মনে হয় খুব বিজ্ঞ ও বুদ্ধিমান ছিল। তাই ইউসুফকে খেয়েছে কিন্তু
তার জামার কোন ক্ষতি করেনি।
এভাবে হযরত ইয়াকুব (আ.)—এর কাছে তাদের জালিয়াতি ফাঁস হয়ে
গেল। তিনি বললেন :
قَالَ بَلۡ سَوَّلَتۡ لَكُمۡ أَنفُسُكُمۡ أَمۡرٗاۖ فَصَبۡرٞ جَمِيلٞۖ وَٱللَّهُ ٱلۡمُسۡتَعَانُ عَلَىٰ مَا تَصِفُونَ (سُورَةُ يُوسُفَ : ۱٨)
“ইউসুফকে বাঘে খায়নি, বরং তোমাদের মন একটি কাহিনী খাড়া করেছে। এখন আমার জন্যে উত্তম হল ধৈর্যধারণ করা এবং তোমরা যা বল, তাতে আল্লাহ্ তা’আলার সাহায্য প্রার্থনা করা।” (সূরা ইউসুফ: ১৮)
ইউসুফ (আ) কে কূপে নিক্ষেপ করার ঘটনা
এদিকে ঘটনাক্রমে মিসরগামী একটি কাফেলা
পথভুলে সেই জঙ্গলে এসে যায়। তারা অদূরেই একটি কূপ দেখে পানি সংগ্রহকারী দলকে পানি
আনার জন্যে সেখানে প্রেরণ করল। মালেক ইবনে দো’বর নামে জনৈক ব্যক্তি কূপে বালতি ফেলল। ইউসুফ সর্বশক্তিমানের সাহায্য
প্রত্যক্ষ করে বালতির রশি শক্ত করে ধরলেন। পানির পরিবর্তে বালতির সাথে একটি সমুজ্জ্বল
মুখমণ্ডল মালেকের দৃষ্টিতে ভেসে উঠল।
এ মুখমণ্ডলের ভবিষ্যত মাহাত্ম্য থেকে দৃষ্টি
ফিরিয়ে নিলেও উপস্থিত ক্ষেত্রে অনুপম সৌন্দর্য ও গুণগত উৎকর্ষের নিদর্শনাবলী তার মহত্ত্বের
কম পরিচায়ক ছিল না।
অভিনব ভঙ্গিতে কূপের অন্তঃস্থল থেকে ভেসে উঠা এই অল্পবয়স্ক, অপরূপ ও বুদ্ধিদীপ্ত বালককে দেখে মালেক সোল্লাসে চিৎকার করে উঠল : আরে, সুসংবাদ শুন, এতো এক চমৎকার শিশু বের হয়ে এসেছে।
ইউসুফের রূপ লাবণ্য সম্পর্কে সহীহ্ মুসলিমের
মে’রাজ
সম্পর্কিত এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ্ (সা.) বলেন : “আমি হযরত ইউসুফ (আ.)—এর সাথে সাক্ষাতের পর দেখলাম, আল্লাহ্ তা’আলা সমগ্র বিশ্বের রূপ ও সৌন্দর্যের
অর্ধেকই তাকে দান করেছেন। আর অবশিষ্ট অর্ধেক সমগ্র বিশ্বে বন্টন করা হয়েছে।”
পূর্বেই বলা হয়েছে, ইহুদা প্রত্যহ কূপের
মধ্যে ইউসুফের কাছে খাবার পৌঁছিয়ে দিত। তৃতীয় দিন তাকে কৃপের মধ্যে না পেয়ে সে ফিরে
এসে ভাইদের কাছে ঘটনা বর্ণনা করল। অতঃপর সকলেই একত্রে সেখানে পৌঁছল এবং অনেক খোঁজাখুঁজির
পর কাফেলার কাছে ইউসুফকে পেল। তারা কাফেলাকে বলল : এই ছেলেটি আমাদের ক্রীতদাস। পলায়ন
করে এখানে এসেছে। অতঃপর তারা খুব সস্তা মূল্যে মাত্র কয়েক দিরহামের বিনিময়ে ইউসুফকে
কাফেলার হাতে বিক্রয় করে দিল। এ ব্যাপারে তারা ধন—সম্পদের প্রতি অনাসক্তই ছিল। কারণ, তাদের আসল লক্ষ্য ছিল ইউসুফ কে পিতার
কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া।
কাফেলা ইউসুফকে মিসরে নিয়ে যাওয়ার পর
বিক্রয়ের কথা ঘোষণা করতেই ক্রেতারা বাড়িয়ে বাড়িয়ে দাম বলতে লাগল। শেষ পর্যন্ত
ইউসুফের ওজনের সমান স্বর্ণ, সমপরিমাণ মৃগনাভি এবং সমপরিমাণ রেশমী বস্ত্র দাম সাব্যস্ত
হয়ে গেল। আযীযে—মিসর এ সমস্ত দ্রব্যসামগ্রী দিয়ে ইউসুফকে ক্রয় করে নিল।
আযীযে—মিসর ছিল মিসরের অর্থমন্ত্রী। তার নাম ছিল কিতফীর কিংবা ইতফীর। আযীযে—মিসর ছিল তার উপাধি। তৎকালে আমালেকা
গোত্রের জনৈক রাইয়ান ইবনে ওসায়েদ ছিল মিসরের সম্রাট। আযীয়ে মিসরের স্ত্রীর নাম ছিল
যুলায়খা।
আযীযে—মিসর ইউসুফকে বাড়ীতে নিয়ে যাওয়ার পর স্ত্রীকে নির্দেশ দিল এর বসবাসের
জন্যে উত্তম ব্যবস্থা করে দাও। গোলামের মত রেখো না। আমাদের তো সন্তান নেই। সে বড় হয়ে
আমাদের কাজে আসতে পারে কিংবা আমরা তাকে পুত্র করে নিতে পারব।
ইউসুফ (আ) একটি কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হলেনঃ
ইউসুফ আযীযে মিসরের গৃহে অত্যন্ত সুখে—শান্তিতে বাস করতে লাগলেন। ক্রমে ক্রমে তিনি যৌবনে পদার্পণ করলেন। এরপরই তিনি একটি পরীক্ষার সম্মুখীন হলেন।
যে মহিলার গৃহে তিনি বাস করতেন অর্থাৎ, যুলায়খা, সে তার প্রতি ভীষণরূপে প্রেমাসক্ত হয়ে পড়ল এবং তার সাথে স্বীয় কামনা—বাসনা চরিতার্থ করার জন্যে অবিরাম ফুসলাতে লাগল। সে এক সময় গৃহের দরজা বন্ধ করে দিল এবং ইউসুফকে বলতে লাগল: এসে যাও, তোমাকেই বলছি। ইউসুফ বললেন: মাআযাল্লাহ্! আল্লাহ্ রক্ষা করুন; এটা মহাপাপ।
এছাড়া তোমার স্বামী আমায় লালন—পালন করেছেন। আমার বসবাসের সুবন্দোবস্ত
করেছেন। অতএব আমি কি তার সম্ভ্রম নষ্ট করব? আর যারা নিমকহারাম, অকৃতজ্ঞ, তারা কোনদিন
সফলতা অর্জন করতে পারে না। দুনিয়াতেই তারা লাঞ্ছিত হয়। পরকালের শাস্তি তো আছেই।
যুলায়খা যখন আবার পীড়াপীড়ি করল, তখন ইউসুফ প্রাণপণে উর্ধ্বশ্বাসে সেখান থেকে দৌড় দিলেন। যুলায়খাও তাকে ধরার জন্যে পিছনে পিছনে দৌড় দিল। দৌড়ের অবস্থায় ইউসুফকে ধরতে যেয়ে তার জামা পিছনের দিক থেকে ছিড়ে ফেলল। কিন্তু ইউসুফ দরজা খুলে বাইরে চলে গেলেন।
যুলায়খাও পিছনে পিছনে বাইরে চলে এল। ঠিক
এই মুহুর্তে যুলায়খার স্বামী আযীযে—মিসরকে দরজার কাছে দণ্ডায়মান দেখা গেল। স্বামীকে দেখে যুলায়খা কিংকর্তব্যবিমূঢ়
হয়ে পড়ল এবং তৎক্ষণাৎ কৌশলের আশ্রয় নিল এবং ইনিয়ে—বিনিয়ে বলতে লাগল : যে ব্যক্তি
তোমার পত্নীর সাথে কুকর্মের ইচ্ছা করে, তার শাস্তি কারাবাস অথবা দৈহিক পিটুনিই হতে
পারে।
দুগ্ধপায়ী শিশু ইউসুফের মু’জিযা স্বরূপ কথা বলতে শুরু করলঃ
ইউসুফ বললেন: আমার বিরুদ্ধে তার অভিযোগ
সম্পূর্ণ মিথ্যা। বরং ব্যাপার উল্টো। সে—ই স্বীয় কুবাসনা চরিতার্থ করার জন্যে আমাকে ফুসলাচ্ছিল।
এ সময়ে যুলায়খা পরিবারের একটি দুগ্ধপায়ী শিশু ইউসুফের মু’জিযা স্বরূপ কথা বলতে শুরু করল। সে বলল: ইউসুফ পবিত্র। সে একটি যুক্তিসঙ্গত আলামত বর্ণনা করে বিজ্ঞজনোচিত ফায়সালাও প্রদান করল। সে বলল: ইউসুফের জামা দেখ, কোন দিকে ছিড়েছে। যদি সামনের দিক থেকে ছিঁড়ে থাকে, তবে যুলায়খা সত্য বলছে এবং ইউসুফ মিথ্যা বলছে। আর যদি জামাটি পিছন দিকে ছিঁড়ে থাকে, তবে যুলায়খা মিথ্যাবাদিনী এবং ইউসুফ সত্যবাদী। আযীযে মিসর যখন ইউসুফের জামা পিছন দিকে ছিন্ন দেখল, তখন যুলায়খাকে বলল: এটা তোমাদের ছলনা।
আর তোমাদের ছলনা বড় মারাত্মক। এরপর ইউসুফের
দিকে মুখ ফিরিয়ে বলল: ইউসুফ, এ বিষয়টি ছেড়ে দাও। এ সম্পর্কে আলোচনা করো না। যুলায়খাকে
আবার বলল: তুমি আপন অপরাধের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা কর।
মহিলাদের ছুঁড়ি দিয়ে হাত কেটে ফেলার ঘটনা
এদিকে নগরীর মহিলাদের মধ্যে কানাঘুষা শুরু হয়ে গেল যে, আযীযে মিসরের পত্নী তার গোলামকে দিয়ে কুমতলব চরিতার্থ করতে চায়। সে তার প্রেমে পাগলিনী হয়ে গেছে। এটা তার প্রকাশ্য ভ্রান্তি ছাড়া কিছু নয়। যুলায়খা তাদের কুৎসা রটনার কথা জানতে পেরে তাদেরকে এক ভোজসভায় আমন্ত্রিত করল। তাদের জন্যে বালিশে হেলান দিয়ে বসার উপযোগী বিছানা পাতা হল। যখন তারা আগমন করল, তখন তাদের সামনে বিভিন্ন প্রকার খাদ্য ও ফল উপস্থিত করা হল। তন্মধ্যে কিছু খাদ্যবস্তু চাকু দিয়ে কেটে খাওয়ার মত ছিল।
তাই প্রত্যেককে একটি করে চাকু দেওয়া হল। এসব আয়োজন সমাপ্ত করে অন্য এক কক্ষে অবস্থানকারী ইউসুফকে যুলায়খা বলল : তাদের সামনে একটু এসে যাও তো! ইউসুফ কোন সদুদ্দেশ্যে বলা হয়েছে মনে করে তাদের সামনে এসে গেলেন। আমন্ত্রিত মহিলারা তার অভূতপূর্ব রূপ সৌন্দর্য দেখে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেল এবং চরম হতবুদ্ধিতার মধ্যে ফল কাটার পরিবর্তে আপন আপন হস্ত কেটে ফেলল।
তারা অবাক বিস্ময়ে বলতে লাগল : আল্লাহ্ তা’আলার কসম, এ মানব নয়, একজন মহানুভব ফেরেশ্তা! যুলায়খা বলল : দেখে নাও, এ সেই ব্যক্তি, যার সম্পর্কে তোমরা আমাকে ভর্ৎসনা করতে। বাস্তবিকই আমি তাকে দিয়ে কুবাসনা চরিতার্থ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সে নিষ্পাপ। ভবিষ্যতে সে যদি আমার আদেশ পালন না করে, তবে অবশ্যই কারাগারে প্রেরিত হবে এবং লাঞ্ছিত হবে।
সমাগত মহিলারাও ইউসুফকে বলল : যে মহিলা তোমার এতটুকু উপকার করেছে, তার প্রতি এমন বিমুখতা তোমার জন্যে শোভা পায় না। ইউসুফ দেখলেন, মহিলারা সকলেই যুলায়খার সুরে সুর মিলাচ্ছে। তাদের চক্রান্ত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্যে তিনি আল্লাহ্ তা’আলার কাছে এই বলে দোয়া করলেন : হে আমার পালনকর্তা! যে অবৈধ কাজের দিকে মহিলারা আমাকে আহ্বান করছে, তার চেয়ে কারাগারে যাওয়াই আমি অধিক পছন্দ করি।
ইউসুফ (আ) কে কারাগারে প্রেরণ ও স্বপ্নের ব্যাখ্যা
অতএব যদি আপনি এই চক্রান্ত প্রতিহত না করেন, তবে আমি তাদের দিকে ঝুঁকে পড়ব এবং নির্বুদ্ধিতার কাজ করে বসব। আল্লাহ্ তা’আলা তাঁর দোয়া কবুল করলেন।
ইউসুফের পবিত্রতার বিভিন্ন নিদর্শন দেখার
পর স্বয়ং আযীযে—মিসরের মনে কোন সন্দেহ রইল না। কিন্তু জনসাধারণের মন থেকে বিষয়টি মুছে
ফেলার উদ্দেশ্যে তার কাছে এটাই সমীচীন মনে হল যে, ইউসুফকে কিছুদিনের জন্যে কারাগারে
রাখা দরকার।
ইউসুফের সাথে সে সময়েই আরও দু’জন রাজকীয় ক্রীতদাস কারাগারে প্রবেশ করল। তাদের একজন সম্রাটকে সুরা পান করাত এবং অন্যজন ছিল রুটি পাকানোর বাবুর্চি। তারা সম্রাটের মদে ও খাদ্যে বিষ মিশ্রিত করেছিল বলে সন্দেহ করা হয়েছিল।
তারা ইউসুফের মধ্যে
সাধুতার লক্ষণ দেখতে পেয়েছিল। তাই তাদের একজন ইউসুফকে বলল : আমি স্বপ্নে দেখেছি যে,
মদ তৈরি করার উদ্দেশ্যে আঙুরের রস নিংড়াচ্ছি এবং সম্রাট কে সেই মদ পান করাচ্ছি। অপর
কয়েদী বলল : আমি স্বপ্নে নিজেকে দেখলাম, মাথায় রুটির ঝুড়ি নিয়ে যাচ্ছি। আর তা থেকে
পাখীরা খুঁটে খুঁটে রুটি খাচ্ছে। আমাদেরকে স্বপ্নের ব্যাখ্যা বলে দিন। আমরা আপনাকে
একজন সাধু ব্যক্তি মনে করি।
ইউসুফ যখন দেখলেন, তারা সরল বিশ্বাসে তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হয়েছে, তখন তিনি তাদেরকে সর্বপ্রথম ঈমানের দাওয়াত দিতে চাইলেন। তাই, প্রথমে তাদের অন্তরে আরও আস্থা সৃষ্টি করার জন্যে একটি মু’জিযা উল্লেখ করলেন। বললেন : তোমাদের জন্যে যে খাদ্য প্রত্যহ তোমাদের বাসা থেকে কিংবা অন্য কোন জায়গা থেকে আসে, তা আসার আগেই আমি খাদ্যের গুণাগুণ, পরিমাণ ও সময় সম্পর্কে তোমাদেরকে বলে দেব। আর বাস্তবে আমার সরবরাহকৃত তথ্য সব সত্যও হবে।
তবে এটা কোন ভবিষ্যত কথন, জ্যোতির্বিদ্যা অথবা অতীন্দ্রিয়বাসের ভেলকি নয়; বরং আমার পালনকর্তা ওহীর মাধ্যমে আমাকে যা বলে দেন, আমি তাই জানিয়ে দেই। অতঃপর তিনি কুফরের নিন্দা ও তৎপ্রতি নিজের বিমুখতা বর্ণনা করে বললেন : আমি নবী পরিবারের একজন সদস্য এবং তাদেরই সত্যধর্মের অনুসারী। আমার পিতৃপুরুষ হচ্ছেন হযরত ইবরাহীম (আ.), হযরত ইসহাক (আ.) ও হযরত ইয়াকূব (আ.)। এ বংশগত আভিজাত্যও স্বভাবতই মানুষের আস্থা অর্জনে সহায়ক হয়।
তিনি আরও বললেন : আল্লাহ্ তা’আলার সাথে কাউকে তাঁর গুণাবলীতে
অংশীদার মনে করা মোটেই বৈধ নয়। এ সত্য ধর্মের তাওফীক আল্লাহ্ তা’আলারই অনুগ্রহ। তিনি সুস্থ বিবেক—বুদ্ধি দান করে সত্যকে গ্রহণ করা
আমাদের জন্যে সহজ করে দিয়েছেন। কিন্তু অনেক লোক এ নেয়ামতের কদর ও অনুগ্রহ স্বীকার
করে না।
অতঃপর তিনি কয়েদীদেরকেই প্রশ্ন করলেন
আচ্ছা, তোমরাই বল, অনেক উপাস্যের উপাসক হওয়া উত্তম, না এক আল্লাহ্ তা’আলার দাস হওয়া ভাল, যিনি সবার
উপরে পরাক্রমশালী? তোমরা এবং তোমাদের পিতৃপুরুষেরা কিছু সংখ্যক প্রতিমাকে পালনকর্তা
মনে করে নিয়েছ। অথচ এরা নিছক নামসর্বস্ব উপাস্য।
তাদের মধ্যে এমন কোন সত্তাগত গুণ নেই যে,
তাদেরকে সামান্যতম শক্তি ও ক্ষমতার অধিকারী মনে করা যেতে পারে। কারণ, তারা সকলেই চেতনা—অনুভূতিহীন। এটা চাক্ষুষ বিষয়।
আর তাদের সত্য উপাস্য হওয়ার অপর একটি উপায় ছিল এই যে, আল্লাহ্ তা’আলা তাদের উপাসনার জন্যে নির্দেশ
নাযিল করতেন। ফলে আমরা চাক্ষুষ অভিজ্ঞতাকে ছেড়ে আল্লাহ্ তা’আলার নির্দেশ পালন করতাম। কিন্তু
এখানে এরূপ কোন নির্দেশও নেই।
আল্লাহ্ তা’আলা তাদের উপাসনার জন্যে কোন প্রমাণ
ও সনদ নাযিল করেননি। বরং তিনি একথাই বলেছেন যে, নির্দেশ ও শাসন—ক্ষমতার অধিকার আল্লাহ্ ব্যতীত
কারও নেই। অতএব আল্লাহ্ ব্যতীত কারও ইবাদত করবে না। আমার পিতৃপুরুষেরা এ সত্য ধর্মই
আল্লাহ্ তা’আলার পক্ষ থেকে প্রাপ্ত হয়েছেন। কিন্তু অধিকাংশ লোক এ সত্য জানে না।
প্রচার ও দাওয়াত সমাপ্ত করার পর ইউসুফ
কয়েদীদের স্বপ্নের দিকে মনোযোগ দিলেন এবং বললেন : তোমাদের একজন মুক্তি পাবে এবং চাকরীতে
পুনর্বহাল হয়ে সম্রাটকে পূর্ববৎ মদ্যপান করাবে। আর অপরজনের অপরাধ প্রমাণিত হয়ে যাবে
এবং তাকে শূলে চড়িয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হবে। পাখীরা তার মাংস ঠুকরে ঠুকরে খাবে।
আমি যে ব্যাখ্যা দিলাম, তা নিছক অনুমান—ভিত্তিক নয়; বরং এটাই আল্লাহ্ তা’আলার অটল ফায়সালা।
আর যে ব্যক্তি সম্পর্কে রেহাই পাবে বলে ধারণা ছিল, অতঃপর ইউসুফ তাকে বললেন : যখন তুমি মুক্ত হয়ে কারাগারের বাইরে যাবে এবং শাহী দরবারে পৌঁছবে, তখন সম্রাটেরকাছে আমার বিষয়ে বলবে।
আরো পড়ুনঃ